শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কবর জীবনের কথা

মো. আবদুর রহমান:
মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য। এর থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না। ইসলামি বিধানমতে, মৃত ব্যক্তির দেহ দাফন করা হয়। মৃত্যুর পর থেকে কেয়ামত পর্যন্ত সময়টুকু মানুষ কবরে অবস্থান করবে। শরিয়তের পরিভাষায় এই সময়কালকে আলমে বারজাখ বা অন্তর্বর্তীকাল বলা হয়। বারজাখ জীবনকে সাধারণত কবর জীবন বলা হয়।

কবর জীবনের প্রথম ধাপ হলো- ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসাবাদ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয়, তখন কালো বর্ণের এবং নীল চোখবিশিষ্ট দুজন ফেরেশতা তার কাছে আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। তাদের মধ্যে একজনকে মুনকার এবং অন্যজনকে নাকির বলা হয়।’ -সুনানে তিরমিজি : ১০৭১

কবরে সওয়াল জওয়াব প্রসঙ্গে ইসলামি স্কলাররা বলেন, কবরে প্রত্যেক মানুষকে আরবিতে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। তা হলো- মান রাব্বুকা? ওয়া মা দীনুকা? ও মান নাবিয়্যুকা? অর্থাৎ তোমার রব কে? তোমার দীন বা ধর্ম কী? তোমার নবী কে? প্রশ্নের শেষাংশটি বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্নভাবে রয়েছে। যেমন- মান হাজার রাজুল? নবী কারিম (সা.)-এর প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হবে, এই ব্যক্তি কে? যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এসব প্রশ্নের উত্তরে মুমিন বান্দা বলবে, আমার রব আল্লাহ, আমার ধর্ম ইসলাম, আমার নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) অথবা তিনি হলেন আমাদের মাঝে প্রেরিত নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তারপর জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কীভাবো জানো? মুমিন বান্দা বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, এর ওপর ইমান এনেছি এবং তা বিশ্বাস করেছি। অতঃপর আসমান থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তার জন্য জান্নাতের একটি বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। এছাড়া তার জন্য কবর থেকে জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। ফলে তার দিকে জান্নাতের কোমল হাওয়া ও সুগন্ধি আসতে থাকবে। এরপর তার কবরকে তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেওয়া হয় এবং সেখানে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তির জন্য কবরও জান্নাত।

আর যারা পাপী, গোনাহগার ও অবিশ্বাসী- তারা প্রশ্নের উত্তরে বলবে, হাঁ! লা আদরি। হায়! আমি কিছুই জানি না। তখন আসমান থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন, সে মিথ্যা বলেছে। সুতরাং তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে দাও। আর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। তখন তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দেওয়া হয়। এসময় তার দিকে জাহান্নামের আগুনের উত্তপ্ত ও লু হাওয়া আসতে থাকে। এছাড়া তার কবরকে এত সংকীর্ণ করে দেওয়া হয় যাতে তার একদিকের পাঁজরের হাড় অপর দিকের পাঁজরের হাড়ের মধ্যে ঢুকে যায়। অতঃপর তার জন্য একজন অন্ধ ও বধির ফেরেশতাকে নিযুক্ত করা হয়, যার হাতে একটি লোহার হাতুড়ি থাকে। যদি এই হাতুড়ি দ্বারা কোনো পাহাড়কে আঘাত করা হয়, তাহলে পাহাড়ও ধুলোয় পরিণত হয়ে যাবে। আর সেই ফেরেশতা এই হাতুড়ি দিয়ে তাকে প্রচ- জোরে আঘাত করতে থাকে। আর সে আঘাতের চোটে এত বিকট শব্দে চিৎকার করে, যা মানুষ ও জিন ছাড়া পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সব সৃষ্টিজীবই তা শুনতে পায়। আঘাতের ফলে সে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। তারপর আবার তার দেহে আত্মা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে তার শাস্তি চলতে থাকে। মূলত পাপী ব্যক্তি কবরেই জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, কবর হলো- জান্নাতের বাগানসমূহ থেকে একটি বাগান কিংবা জাহান্নামের গর্তসমূহ থেকে একটি গর্ত। -সুনানে তিরমিজি ২৪৬০

কবরের শাস্তি গভীরভাবে ভাববার বিষয়। কবরের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ চাওয়ার জন্য হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আদেশ করেছেন। কথাটি তিনি বারবার বলে মানুষকে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করেছেন। হজরত উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কবর হচ্ছে আখেরাতের সর্বপ্রথম মঞ্জিল। যদি কেউ এ মঞ্জিল থেকে মুক্তি পেয়ে যায়, তাহলে তার পরবর্তী মঞ্জিলসমূহ অপেক্ষাকৃত সহজ হয়ে যাবে। আর যদি কবরে মুক্তিলাভ করতে না পারে, তাহলে পরবর্তী মঞ্জিলগুলো আরও কঠিন ও জটিল হয়ে যাবে।’

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘আমি এমন কোনো ভয়াবহ স্থান দেখিনি, যা কবরের চেয়ে ভয়াবহ হতে পারে।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৩০৮

তাই কবরের ভয়াবহ শাস্তির কথা স্মরণ করে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা এবং কবরের শাস্তি থেকে তার কাছে পরিত্রাণ চাওয়া আমাদের জন্য একান্ত জরুরি। এক্ষেত্রে দান-সদকা হতে পারে মানুষের উত্তম বিনিয়োগ। হজরত উকবা ইবন আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই দান-সদকা দানকারীকে কবরের উত্তাপ থেকে রক্ষা করবে। আর মুমিন ব্যক্তি কেয়ামত দিবসে আল্লাহর আরশের ছায়ায় অবস্থান করবে।’ -তাবারানি : ৭৮৮

বিভিন্ন দোয়ার মাধ্যমেও জাহান্নাম ও কবরের আজাব থেকে মুক্তিলাভ করা যায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার উম্মতদের জাহান্নাম ও কবরের আজাব থেকে পানাহ চাওয়ার জন্য বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন। যা বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত রয়েছে। যেমন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা যখন কেউ নামাজে তাশাহহুদ পড়ো, তখন চারটি জিনিস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই দোয়া পাঠ করবে উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নাম, ওয়ামিন আজাবিল কবরি, ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি, ওয়ামিন শাররি ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জাল। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জাহান্নাম ও কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই। আর জীবনকালীন ও মৃত্যুর পরের ফেতনা থেকে এবং মাসিহ দাজ্জালের ফেতনার ক্ষতি থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ -সহিহ মুসলিম : ১২১১

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION